ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংসে ইসরাইলের পাশে সামরিকভাবে যুক্ত হওয়ার কথা ভাবছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কারণ ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির 'খুব কাছাকাছি' বলে দাবি করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরাইলও বলছে, ইরানের পারমাণবিক হামলার আশঙ্কায় ১৩ জুন রাতে দেশটির সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ শুরু করেছে তারা।
এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে- ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের এসব যুক্তির বৈধতা আসলে কতটুকু? এ নিয়ে জাতিসংঘ সনদের তথ্য বলছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পর থেকে এক দেশের ওপর অন্য দেশের আগ্রাসনের কোনো বৈধতা নেই। কেবল আত্মরক্ষার জন্য সামরিক পদক্ষেপের বৈধতা রয়েছে জাতিসংঘের ওই দলিলে।
তবে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে সব ধরণের দ্বন্দ্ব শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। সেই চেষ্টা ব্যর্থ হলে বলপ্রয়োগের বৈধতা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। কিন্তু আলোচনা চলার মধ্যেই কোনো দেশ আক্রান্ত হলে সে দেশ আত্মরক্ষার অধিকার থেকে পাল্টা হামলার বৈধতা রাখে।
প্রশ্ন হলো, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা করে ইসরাইলের আত্মরক্ষার দাবি কতটা আন্তর্জাতিক আইনে যুক্তিসংগত। এমন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ইসরাইল ও তার মিত্ররা। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত-আইসিসি'র সাবেক সদস্য মার্কো মিলানোভিচের মতে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরাইলের হামলা আন্তর্জাতিক আইনে বৈধ নয়। আক্রমণ আসন্ন এমন যুক্তি দিয়ে আগে হামলা চালিয়ে, সে হামলার বৈধতা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে একমত, এথেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক মারিয়া গাভুনেলিও।
জানার বিষয় হলো, ইরানের পারমাণবিক বোমা তৈরির বিষয়ে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএ সবশেষ কোনো তথ্য- প্রমাণ সামনে এনেছিল কি-না। এক্ষেত্রে দেখা যায়, ৯ জুন আইএইএর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি জানান, ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কে তথ্য দেয়ার আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা মানছে না। এতে দেশটির কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ কি না, যাচাই করার সক্ষমতা অনেক কমে গেছে। ইরানের দ্রুতগতিতে উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুত করাকেও গুরুতর উদ্বেগের বিষয় বলে মন্তব্য করেন গ্রোসি।
১৯৮১ সালেও আগাম আত্মরক্ষার যুক্তি দেখিয়ে ইরাকের নির্মাণাধীন ওসিরাক পারমাণবিক চুল্লিতে হামলা চালিয়ে তা ধ্বংস করে দিয়েছিলো ইসরাইল। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ৪৮৭ নম্বর প্রস্তাবের মাধ্যমে ওই হামলার কঠোর নিন্দাও জানিয়েছিল। এ-ও বলা হয়েছিল যে, ইসরাইল তখনও পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে সই করেনি। বর্তমানে ইসরাইলের কাছে প্রায় ৯০টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত-আইসিসির সাবেক সদস্য মার্কো মিলানোভিচ বলেন, ‘ইরান হামলা চালিয়েছে, ইসরাইল সেই হামলার জবাব দিচ্ছে, বর্তমান পরিস্থিতি কিন্তু তেমন নয়। ইরান সরাসরি ইসরাইলে আগে হামলা চালায়নি। ইসরাইলকে যার জবাব দিতে হচ্ছে। বরং ইসরাইলই আগে ইরানে হামলা চালিয়েছে। আক্রমণ আসন্ন এমন যুক্তি দিয়ে আগে হামলা চালিয়ে বৈধতা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
এথেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক মারিয়া গাভুনেলিও মার্কো বলেন, ‘সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় আগ বাড়িয়ে আগ্রাসন চালানো আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ। এ বিষয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই। তবে পারমাণবিক অস্ত্রকে অনেক সময় 'ব্যতিক্রম' হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই আত্মরক্ষার যুক্তি দাঁড় করাতে ইসরাইলকে নির্ভরযোগ্য তথ্য দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে তার প্রমাণ হাজির করতে হবে।’