চলতি বছরের এপ্রিল থেকে বন্ধু কিংবা শত্রু সব দেশের ওপরই শুল্কের বোঝা চাপিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস এবং মার্কিন পণ্য ও ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর বিভিন্ন হারে শুল্ক আরোপ করে যাচ্ছেন তিনি। তবে কার্যকর সমঝোতায় পৌঁছাতে আলোচনার সুযোগও রেখেছেন ট্রাম্প।
বেশিরভাগ অংশীদার দেশের ওপর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে ট্রাম্প প্রশাসন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাফ কথা, সবাইকে শুল্ক দিতে হবে। এতে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও কিছু করার নেই। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাতে আগামী ১ আগস্ট পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে।
ইউরোপের দেশগুলোর পণ্যের ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক বসানোর হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। যা অস্বস্তি ও অনিশ্চয়তায় ফেলেছে গোটা ইউরোপের বাণিজ্যকে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য কমিশনার বলছেন, ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইইউয়ের বাণিজ্য কার্যত বন্ধ হয়ে যাবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য কমিশনার মারোস সেফকোভিচ বলেন, ‘৩০ শতাংশ বা এর ওপরে শুল্কারোপের প্রভাব কমবেশি একই হবে। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধ হয়ে যেতে পারে ইউরোপের বাণিজ্য। শুল্কের এই হার বাণিজ্যের উপর বিশাল প্রভাব পড়বে। তখন বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হবে দাঁড়াবে। আটলান্টিকের উভয় পাশেই সরবরাহ শৃঙ্খল ভেঙে পড়বে।’
এরই মধ্যে ইউরোপের বাজারে ট্রাম্পের শুল্কারোপের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। শেয়ারবাজারের প্রধান সূচকগুলো নিম্নমুখী। সবচেয়ে বাজে প্রভাব পড়েছে গাড়ি শিল্পে। বাজারের অনিশ্চয়তায় উদ্বেগে বিনিয়োগকারীরা। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য চাপ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপের ব্যবসায়ীরা।
৩০ শতাংশ শুল্ক হারে বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়া ইউরোপের জন্য প্রায় অসম্ভব। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সরবরাহে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আলোচনায় কার্যকর কোনো সমাধান না আসলে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়াবে ইউরোপ।
ব্রাসেলস-ভিত্তিক থিংক ট্যাংক ব্রুগেল জ্যেষ্ঠ গবেষক জ্যাকব ফাঙ্ক কিরকগার্ড বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের সত্যিই কোন বিকল্প নেই। যদি ১ আগস্টের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইইউ'র কার্যকর চুক্তি না হয়। তাহলে, দুই পক্ষের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক। তবে এর শেষ কোথায় হবে তা বলা মুশকিল।’
এদিকে, ইউরোপের জনগণ বলছে, যুক্তরাষ্ট্র বা ট্রাম্পের কাছে নতি স্বীকার করার প্রশ্নই আসে না। বরং মার্কিন পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করা উচিত।
এরই মধ্যে ফরাসি ও জার্মান রাষ্ট্রপ্রধান প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, বাণিজ্য যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে। পাশাপাশি ট্রাম্পের একতরফা সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করা উচিত বলে মনে করেন তারা।
তবে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি একটু ভিন্ন পথেই হাঁটছেন। এক বিবৃতিতে তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ন্যায্য চুক্তি সম্ভব। আটলান্টিকের দুই পাশে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করার কোনো মানে হয় না।