আলোচনায় আগ্রহ নেই তেহরানের; পরমাণু ইস্যুতে ট্রাম্পের দাবি ঘিরে তৎপর ওয়াশিংটন

ট্রাম্পের বৈঠক ঘোষণা প্রত্যাখ্যান ইরানের

ডোনাল্ড ট্রাম্প, জেরোম পাওয়েল
মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

পরমাণু ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে এখনও পরিকল্পনা করেনি ইরান। আগামী সপ্তাহে বৈঠকের ঘোষণা দেয়া ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় একথা জানান ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এদিকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে ট্রাম্পের বক্তব্যকে সঠিক প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছে মার্কিন সিনেটসহ হোয়াইট হাউজ ও পেন্টাগন। তাদের দাবি, মার্কিন হামলার আগে ইরান ইউরেনিয়াম সরিয়ে নেয়ার কোনো প্রমাণ নেই। এদিকে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর স্বাভাবিক হয়েছে তেহরানের জনজীবন।

গেল ২১ জুন ইরানের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বি-টু স্টেলথ বোমারু বিমান দিয়ে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। যা এ যাবত কালে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের ১৪টি বাঙ্কার-বাস্টার বোমা ফেলা হয় স্থাপনাগুলোতে। এই অভিযানে অংশ নেয় ১২৫টিরও বেশি মার্কিন সামরিক বিমান।

তবে এত ব্যয়বহুল ও বড় অভিযানের সফলতা নিয়ে উঠে নানা প্রশ্ন। খোদ ট্রাম্প প্রশাসনেই তা নিয়ে রীতিমতো বাকযুদ্ধ শুরু হয়েছে। মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। এবার নিজেরদের সঠিক প্রমাণ করতে বাঙ্কার বাস্টার বোমার কার্যকারিতা নিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ পেন্টাগন। যেখানে এই বোমার সক্ষমতা ও বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ কয়েকবার জোর দিয়ে বলেছেন, ইরানের পরমাণু স্থাপনা পুরোপুরি গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তবে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার ফাঁস হওয়া তথ্য বলছে, আদতে খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এরপর থেকেই বিতর্ক যেন থামছেই না। এদিকে, ট্রাম্পের বক্তব্যকে সঠিক প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছে সিনেটসহ, হোয়াইট হাউজ ও পেন্টাগন।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর পরিচালক জন র‍্যাটক্লিফ, প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যানসহ সিনেটের শতাধিক সদস্য ইরানের ওপর হামলার বিষয়ে আলোচনা করেন। তাদের মতে, তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে বড় আঘাত করা হয়েছে।

আরকানসাসের রিপাবলিকান সিনেটর সেন টম কটন বলেন, ‘ইরানের সমস্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ধ্বংস করা বা জব্দ করার উদ্দেশে এই হামলা চালায়নি যুক্তরাষ্ট্র। এ ধরনের কর্মকাণ্ড এই অভিযানের অংশ ছিল না। এটি মিশন ইম্পসিবল সিনেমা নয়। ইরান যেন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে না পারে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র ক্যারোলিন লিভিট জানান, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগে পরমাণু স্থাপনাগুলো থেকে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম অপসারণের কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। এদিকে, পেন্টাগনের দাবি, ইরান তার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের কোনো অংশ সরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে তাদের কাছে কোনো গোয়েন্দা তথ্য নেই। উভয়েরই দাবি, পারমাণবিক কর্মসূচিতে ব্যাপকভাবে পিছিয়ে গেছে ইরান।

মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ বলেন, ‘মার্কিন হামলার আগে ইরান তার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিয়েছে, এমন তথ্যের কোনো ভিত্তি নেই। গোয়েন্দাদের কাছেও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত তথ্য পাওয়া যায়নি। অন্য কোথাও তা স্থানান্তর করা হয়েছে কিনা বা সেগুলো সেখানেই ছিল কি না তা জানা নেই।’

এদিকে ন্যাটো সম্মেলনে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, আগামী সপ্তাহেই পরমাণু ইস্যুতে ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বৈঠকের বিষয়ে এখনো কোনো পরিকল্পনা নেই ইরানের। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের এক সাক্ষাৎকারে আব্বাস আরাগচি জানান, আলোচনার আগে তেহরানের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে।

এদিকে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে ইরানের জনজীবন। অনিশ্চয়তা কাটিয়ে নিজ নিজ আবাসস্থলে ফিরছেন ইরানিরা।

ইসরাইলের বিরুদ্ধে সংঘাতে তেহরানের পাশে দাঁড়ানোর জন্য চীনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে ইরান। সংঘাতের পর প্রথম বিদেশ সফরে চীনে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সম্মেলনে যোগ দেন ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদেহ।

এসএস