পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস এবং খামেনির শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের মিশনে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলো ইসরাইল। যোগ দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রও। কিন্তু ইরানের নজিরবিহীন পাল্টা আক্রমণে ধরাশায়ী হয়ে ১২ দিনের মাথায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে মার্কিন হামলায় ইরানের ফোর্দো, নাতাঞ্জ, ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে বলেও দাবি করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
এদিকে যুদ্ধবিরতির দুইদিনের মাথায়- এক ভিডিও বার্তায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি জানান, তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোয় আক্রমণ করে কিছুই অর্জন করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প বিষয়টি অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপন করেছেন বলেও দাবি করেন খামেনি।
খামেনির এমন বক্তব্যের পর ট্রাম্পের দাবি সঠিক প্রমাণে উঠেপড়ে লাগে হোয়াইট হাউজ। দাবি করা হয়, মার্কিন হামলার আগে ইউরেনিয়াম সরিয়ে নেয়ার কোন সময় পায়নি তেহরান।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিটকে বলেন, ‘আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলাম। যুক্তরাষ্ট্র এমন কোনও আলামত পায়নি যে, হামলার আগে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সরানো হয়েছিল।’
স্যাটেলাইট চিত্রে ক্ষয়ক্ষতির দৃশ্য ওঠে আসলেও, সঠিক ক্ষতির পরিমাণ জানা সম্ভব হয়নি। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের পাল্টা-পাল্টি দাবিতে তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ইস্যুতে বিশ্ববাসীর মনে ঘুরপাক খাচ্ছে নানা প্রশ্ন। পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার সক্ষমতা অন্তত কয়েক বছরের জন্য হলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল পিছিয়ে দিতে পেরেছে কি না, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে কৌতূহল। এছাড়াও আক্রমণের পর ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়েও আগ্রহ বাড়ছে জনমনে।
এ অবস্থায় তেহরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি থেকে সরে আসার কোনো লক্ষণ নেই বলে মনে করছেন যুক্তরাজ্যের সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরান বিষয়ক ইতিহাসবিদ আলী আনসারি। বরং মার্কিন হামলার পর, ইরানি কর্মকর্তারা যে ধরনের জোরালো বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন, তাতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি আরও বাড়াতে পারে তেহরান, এমনটাও মনে করছেন অনেকে।
সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরান বিষয়ক ইতিহাসবিদ আলী আনসারি বলেন, ‘ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বন্ধে অনেক ইরানিও আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু মার্কিন হামলার পর ইরানি কর্মকর্তা ও খামেনির বক্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে, তেহরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি থেকে সহসাই সরে আসছেনা।’
এদিকে পরমাণু ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পুনরায় আলোচনা সম্ভব হবে কিনা- এমন প্রশ্নে ইতোমধ্যেই তেহরান নিশ্চিত করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি তারা। এমনকি যুদ্ধবিরতির পর ইরানের প্রভাবশালী গার্ডিয়ান কাউন্সিল পার্লামেন্টে গৃহীত এক বিল অনুমোদন করেছে।
বিলটিতে আইএইএ'র সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার কথা বলা হয়েছে। এতে অনেকটাই স্পষ্ট, বর্তমানে নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচিতে জাতিসংঘের কোনো তদারকি গ্রহণে আগ্রহী নয় তেহরান।