ইসরাইল-ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতের মধ্যে তীব্র হচ্ছে তেহরান-ওয়াশিংটন বৈরীতা।
এ অবস্থায় ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার শঙ্কা প্রকট হচ্ছে। মার্কিন পার্লামেন্ট কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে এ বিষয়ে শুনানি হয়েছে বুধবার (১৮ জুন)। এ সময় এক সিনেটরের প্রশ্নের জবাবে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধ ও শান্তির বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যেকোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুত পেন্টাগন।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ আরো বলেন, ‘তেহরানের একটা চুক্তি করা উচিৎ ছিল। কারণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথার একটা অর্থ আছে। বিশ্বও এটা বোঝে। আর প্রতিরক্ষা বিভাগে, আমাদের কাজ হলো বিকল্পগুলো নিয়ে প্রস্তুত থাকা। আমরা ঠিক তাই করছি।’
এ অবস্থায় তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র হামলা করবেন কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাকে কিছুটা অস্পষ্ট রেখে ট্রাম্প বলেন, ‘ইরানে হামলার বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।’
এ ছাড়া ইসরাইলি হামলার পর ইরান পুরোপুরি প্রতিরক্ষাহীন হয়ে পড়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘ইরানকে আমি ৬০ দিনের একটা সময়সীমা দিয়েছিলাম চুক্তিতে আসার জন্য। তারা তা করেনি। সময়সীমা শেষ হতেই ইসরাইল হামলা করলো। সেটি ছিল দারুণ এক আঘাত। প্রথম রাতেই সব শেষ হয়ে গেছে।’
এদিকে আয়াতুল্লাহ খামেনিকে প্রাণের ভয় দেখিয়ে ইরানকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে চাইছেন ট্রাম্প। তবে ট্রাম্পের এই হুঁশিয়ারি আমলে নেয়নি ইরান। বরং পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরাইলকে কড়া জবাব দিচ্ছে তেহরান।
ট্রাম্পের হুমকি উড়িয়ে দিয়ে বুধবার এক ভিডিও বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রকে চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা। বলেছেন, চলমান সংঘাতে ইসরাইলের হয়ে মার্কিন সেনারা ইরানে হামলা চালালে ওয়াশিংটনকে চরম মূল্য দিতে হবে।
তিনি আরো বলেছেন, যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হলেও ইরান দৃঢ়তার সঙ্গে ইসরাইলকে মোকাবিলা করছে। এখন শান্তি প্রস্তাবে রাজি হওয়ার জন্য জোর দেয়া হলেও তেহরান নমনীয় হবে না।
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, ‘অবশেষে মার্কিন প্রেসিডেন্টও আমাদের হুমকি দিতে শুরু করেছেন। অগ্রহণযোগ্য ও হাস্যকর একটি পোস্ট দিয়ে তিনি আমাকে আত্মসমর্পণ করতে বলছেন। যে কেউ তার আচরণে অবাক হবে। তিনি এমন একটি দেশের মানুষকে হুমকি দিচ্ছেন, যারা কোনোকিছুতেই ভয় করে না।’
এর আগে, মঙ্গলবার (১৭ জুন) মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাবি করেছিলেন ইরানের আকাশসীমা যুক্তরাষ্ট্রের দখলে কিন্তু ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস’ এর ১১তম ধাপে বুধবার ভোররাতে আবারও অত্যাধুনিক হাইপারসনিক ‘ফাত্তাহ’ মিসাইল দিয়ে ইসরাইলি ভূ-খণ্ডে হামলা চালিয়েছে ইরান।
বিপরীতে ইরানেও বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। হামলার পর আইডিএফ দাবি করে, বুধবার ইরানের পরমাণু প্রকল্পের অন্তত ৪০টি অবকাঠামোতে হামলা চালানো হয়েছে। নেতানিয়াহু দাবি করে বলেন, ইরানের বর্তমান শাসনব্যবস্থার উপর প্রচণ্ড শক্তির আঘাত করছে ইসরাইল।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা দু’টি হুমকি দূর করার জন্য এই অভিযান শুরু করেছি। এক, ইরানের পারমাণবিক হুমকি এবং দুই, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি। এসব হুমকি দূর করার জন্য ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা তেহরানের আকাশসীমা নিয়ন্ত্রণে রেখেছি, যার মধ্য দিয়ে আমরা আয়াতুল্লাহর শাসনব্যবস্থার উপর প্রচণ্ড শক্তি দিয়ে আঘাত করছি।’
এদিকে ইসরাইলি হামলার জেরে স্থানীয়দের পাশাপাশি ইরান ছাড়তে শুরু করেছেন ভিনদেশি নাগরিকরা। বিমানব্যবস্থা বন্ধ থাকার কারণে ভোগান্তি পড়তে হয়েছে তাদের। ইসরাইল ছড়তে প্রস্তুত মার্কিনরা।
এ ছাড়া, সংঘাত তীব্রতর আকার ধারণ করায় বিমানবাহী রণতরী নিমিৎজের পর এবার মধ্যপ্রাচ্যে আরো বোমারু বিমান মোতায়েন করছে ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র।
এরই মধ্যে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ভূপাতিত করতে সক্ষম এফ-১৬, এফ-২২ ও এফ-৩৫সহ বিভিন্ন যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে মার্কিন সেনাবাহিনী। পাশপাশি, ইউরোপের ঘাঁটিতে রাখা হয়েছে ৩০টির বেশি যুদ্ধবিমান।