ট্রাম্প-নেতানিয়াহু দ্বিতীয় বৈঠকেও উপেক্ষিত গাজার যুদ্ধবিরতি

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু
বিদেশে এখন
0

২৪ ঘণ্টার মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো ট্রাম্প-নেতানিয়াহু বৈঠকে উপেক্ষিত ছিল গাজায় যুদ্ধবিরতি ইস্যু। বরং জোর দেয়া হয় জিম্মিদের মুক্তির প্রসঙ্গে। আলোচনার মধ্যেই উপত্যকায় একদিনে আরও ৯৫ ফিলিস্তিনে হত্যা করেছে ইসরাইল। গণহত্যা ইস্যুতে সরব ফরাসি প্রেসিডেন্ট। এদিকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে স্পেনের জাতীয় আদালত।

যাদের ধারণা ছিল, এ বৈঠকের এজেন্ডা গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়ন, তারা আবারও ভুল প্রমাণিত হলেন। কারণ দুই নেতার মধ্যে করমর্দন ও খোশগল্প চললেও প্রাধান্য দেয়া হয় ইরান যুদ্ধ এমনকি হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তির প্রসঙ্গ। যেখানে বরাবরের মতো উপেক্ষিত ছিল যুদ্ধবিরতি ইস্যু। এক্সবার্তায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্বয়ং ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী। 

যদিও বৈঠকের আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, গাজার ট্র্যাজেডি সমাধান করা প্রয়োজন। ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা সমাধান চাই। গাজায় যে ট্র্যাজেডি চলছে, তার সমাধান করা প্রয়োজন। আমার মনে হয় সবপক্ষই এ বিষয়ে সমাধানে আসতে চাইছে। যেমনটা আমিও চাচ্ছি।’

বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘গাজায় এখনো আমাদের কাজ বাকি রয়েছে। সকল জিম্মিদের মুক্তির পাশাপাশি হামাসের সামরিক ও প্রশাসনিক সক্ষমতাকে ধ্বংস করতে হবে। কারণ গাজার ভালো ভবিষ্যৎ প্রয়োজন। সবার জন্যই এটি নিশ্চিত করা জরুরি।’

বল প্রয়োগের মাধ্যমে শান্তি স্থাপনের কথা বারবার উল্লেখ করেন নেতানিয়াহু। তবে আত্মসমর্পণ না করার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে হামাস। 

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি এক বিবৃতিতে জানায়, মানসিকভাবে পরাজয় বরণ করেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী। তারা বুঝতে পেরেছেন, চুক্তি ছাড়া জিম্মিদের ফেরত পাবার কোনো পথ খোলা নেই।

যুক্তরাষ্ট্র সফরে যখন ব্যস্ত ছিলেন নেতানিয়াহু, তখন যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করলো স্পেন। গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে স্পেনের জাতীয় আদালত নেতানিয়াহুর পাশাপাশি তদন্ত চালাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইল কাটজ ও বেশ কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। গুরুত্ব দেয়া হবে গেলো ১ জুন ত্রাণ-বহনকারী ম্যাডলিন জাহাজে অভিযানের প্রসঙ্গ।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ সত্ত্বেও গাজায় গণহত্যা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিনভর হামলায় উপত্যকায় প্রাণহানি শতকের ঘর ছুঁইছুঁই। ফুরিয়ে আসছে আল শিফা হাসপাতালের জ্বালানি। তবুও যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় দু’পক্ষের ইতিবাচক সম্পৃক্ততার কথা জানিয়েছে কাতার।

কাতার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ বিন মোহাম্মাদ আল আনসারি বলেন, ‘দু’পক্ষের প্রতিনিধিরা দোহায় রয়েছেন। আমরা আলাদাভাবে তাদের সঙ্গে বৈঠক করছি। আলোচনা এখনো শুরু হয়নি। তবে চুক্তির কাঠামো তৈরিতে কাজ চলছে। আশা করছি শিগগিরই কাঠামো তৈরি করার মাধ্যমে আলোচনা সফল করতে পারবো।’

গাজাবাসীদের দুর্দশা প্রসঙ্গে সোচ্চার ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। যুক্তরাজ্য সফরে ফরাসি প্রেসিডেন্ট জানান, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি স্থাপনে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের বিকল্প নেই। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরাইলের অর্থ সহায়তা স্থগিতের বিষয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাজা কালাস বলেন, ‘ইইউর ২ নং ধারা ইসরাইল ভঙ্গ করেছে কি না, সে বিষয়টি মন্ত্রীরা আলোচনা করছে। আপনারা সবাই পর্যালোচনা দেখছেন। আমাদের প্রধান লক্ষ্য গাজার পরিস্থিতি পরিবর্তন করা। পাশাপাশি উপত্যকাবাসীর জন্য সহায়তা পৌঁছানো।’

ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে। পশ্চিম তীরে নিয়মিত হামলা চলছে। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কখনোই এতটা ঝুঁকির মুখে পড়েনি। সমাধান হলো দ্বিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। আমার মতে এর মাধ্যমেই পুরো অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’

এদিকে পশ্চিমতীরে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ইসরাইলিরা। উল্টো সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে আটক করা হয়েছে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনিকে।

এসএইচ