দুই দিন পরপরই ইউক্রেনকে লক্ষ্য করে ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। প্রতিটি রাত বিভীষিকার মধ্য দিয়ে পার করছেন ইউক্রেনীয়রা। মিসাইলের বিকট বিস্ফোরণ কিংবা গগণবিদারী সাইরেনের শব্দে অধিকাংশ রাত কাটাতে হচ্ছে ভূগর্ভস্থ আশ্রয় কেন্দ্রে।
এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনীয়দের মনে এখন শুধুই শান্তির আকাঙ্ক্ষা। দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষের অবস্থান রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতার পক্ষে। সম্প্রতি দুটি সংস্থার জরিপে উঠে এসেছে এমন তথ্য। জরিপে সমঝোতা বলতে বোঝানো হয়েছে রাশিয়ার দখলকৃত ইউক্রেনের পাঁচভাগের একভাগ অঞ্চলের মালিকানা শর্তহীনভাবে ছেড়ে দেয়া। প্রায় সাড়ে তিন বছরের যুদ্ধে অচলাবস্থা তৈরি হওয়ায় অস্ত্রের বদলে বাড়ছে কূটনীতির প্রতি জনসমর্থন।
ইউক্রেনের স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘যুদ্ধ কখনোই একা একা শেষ হবে না। সবকিছু বন্ধ হলেও কূটনীতি চালিয়ে যেতে হবে। কূটনীতির বিকল্প নেই।’
অন্য একজন বলেন, ‘বন্দী বিনিময় চলছে। এটি অর্জন হতে পারে। তবে বিজয় নয়। আশা করছি, আলোচনার মাধ্যমে ইতিবাচক ফল আসবে।’
বর্তমানে দুই দেশের সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের অবস্থান অনুসারে মানচিত্র নতুন করে আঁকার পক্ষে ১৫ শতাংশের বেশি ইউক্রেনীয়। আর জেলেনস্কির সেনাদের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থনের হার প্রায় ১৩ শতাংশ। যারা ১১ বছর আগে রাশিয়া অধিকৃত ক্রিমিয়া লড়াইয়ের মাধ্যমে ফেরত পেতে চান তারা।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৪ ঘণ্টায় ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে কয়েক হাজার ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও সংঘাত নিরসন করতে পারেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সম্প্রতি ন্যাটো সম্মেলনে এই প্রতিশ্রুতিকে ব্যঙ্গাত্মক হিসেবে উল্লেখ করেন খোদ রিপাবলিকান নেতা। তাই কিয়েভের প্রতি ওয়াশিংটনের সমর্থন দীর্ঘমেয়াদে ধরে রাখা নিয়ে বাড়ছে শঙ্কা। সম্মেলনে ইউক্রেন ইস্যু উপেক্ষিত থাকাও বহন করছে সেই ইঙ্গিত।
সুইডেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কার্ল বিল্ডট বলেন, ‘ন্যাটোতে সামরিক খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে ইউরোপের সুরক্ষার জন্য। ১০ বছরে সাড়ে ৩ শতাংশ। তবে আগামী কয়েকবছরে ইউক্রেনে কী হবে, তা ইউরোপের ভবিষ্যৎ বলে দিবে। এটিকে পরিকল্পনায় রাখা উচিত থাকলেও এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।’
চলতি বছর ইউক্রেনের মাত্র পাঁচ হাজার বর্গ কিলোমিটার বা মোট ভূখণ্ডের এক শতাংশ দখল করেছে রাশিয়া। অন্যদিকে কিয়েভের ভূখণ্ড পুনর্দখলের হারও নগণ্য। এমন পরিস্থিতিতে এই যুদ্ধের শেষ কোথায়, তা নিয়ে সন্দিহান বিশ্লেষকরা।