তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ইরানের পরমাণু স্থাপনা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। ৩০টি বসন্ত পার করে, গেল ১৩ জুন সেই শঙ্কার ইতি টানতে হামলা চালান দেশটির পরমাণু স্থাপনায়। সরাসরি সংঘাতে জড়ায় ইসরাইল-ইরান। এর ঠিক আট দিন পর ইরানের তিন পরমাণু প্রকল্পে বোমা হামলা করে যুক্তরাষ্ট্র। ১৩ জুন শুরু হওয়া সংঘাতে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে ২৩ জুন, এবং তা কার্যকর হয় ২৫ তারিখে।
এই ১২ দিনের ঘাত প্রতিঘাতের পর আবারও আলোচনায় আসে গাজার যুদ্ধের পরিণতি ও সমাধান প্রসঙ্গ। বিপরীতে ইসরাইলের অভ্যন্তরে গুঞ্জন শুরু হয়, কতদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে চান দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘদিন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করা নেতা বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু।
এই সব গুঞ্জনের ভেতরেই দুর্নীতির মামলায় বিপর্যস্থ নেতানিয়াহুর পক্ষে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর প্রতিক্রিয়ায় নেতানিয়াহু বিরোধীরা দাবি করেন, ট্রাম্প ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেও ইসরাইলি বিচারব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট। প্রতি সপ্তাহের মতো গেল শনিবার তেল আবিবের হোস্টেজ স্কয়ারে সরকারবিরোধী যে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানেও নেতানিয়াহুর প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন খোদ ইসরাইলিরাই।
আরো পড়ুন:
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘ইসরাইলিদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখার একমাত্র উপায় এখন গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করে একটি চুক্তির মাধ্যমে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা। আমরা এই যুদ্ধের অবসান চাই। নেতানিয়াহুর এই সুযোগ কাজে লাগানো উচিৎ।’
অন্য একজন বলেন, ‘শুরুতে আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু আমি কোনো অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না। এখন তো মনে হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পও চান যুদ্ধের অবসান হোক। ট্রাম্প ছাড়া কেউ নেতানিয়াহুকে বোঝাতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে না।’
২০১৬ সালে প্রথম নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। যে মামলা চলছে এখনও। সবশেষ গেল শুক্রবার জেরুজালেম ডিস্ট্রিক্ট আদালত এই মামলার শুনানির দিন আরও ২ সপ্তাহ স্থগিত করেছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, কূটনৈতিক, জাতীয় ও নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে ব্যস্ততা বাড়ায়, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীকে ছাড় দিচ্ছে আদালত।
ইসরাইলভিত্তিক সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্টের বিশেষ সম্পাদকীয়তে বলা হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতে স্থায়ী কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারছেন না নেতানিয়াহু। আর দুর্নীতির মামলা, আদালতের শুনানি ইত্যাদি কারণে হারিয়ে ফেলছেন সমাধান সূত্র। সম্পাদকীয়তে ইঙ্গিত করা হচ্ছে, একদিকে নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করা অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ৩টি অক্ষশক্তির সঙ্গে বিরোধে জড়ানো- দুটি কাজ একসাথে চালানো কোনো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।
রাজনৈতিক জীবনের বেশিরভাগ সময়ে ইরানের পারমাণবিক হুমকি বন্ধের কথা বলেছেন নেতানিয়াহু। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য আমলে নিলে, সেই উদ্দেশ্য সফল হয়েছে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর। জেরুজালেম পোস্টের পর্যবেক্ষণ বলছে এখন জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি গাজায় হামাসের সঙ্গে অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়ে ক্ষমতা ছেড়ে দিলে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চূড়ান্ত বিভাজন ঠেকাতে পারবেন নেতানিয়াহু। আর যদি সেটি না করেন, তাহলে অনির্দিষ্টকালের জন্য মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে জড়িয়ে যাবে ইসরাইল।