এক দেশে সেনা অভিযান চালিয়ে যেখানে রাশিয়া পর্যন্ত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে ভোট দিয়েছে, সেখানে ভেটো দিয়েছে শুধু যুক্তরাষ্ট্র। মূলত ইসরাইল যেন উপত্যকায় হামাস নির্মূলের নামে গণহত্যা চালিয়ে যেতে পারে, সেই বৈধতা দিতেই এই নিয়ে টানা কয়েকবার নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে ভেটো দিলো দেশটি।
ওয়াশিংটন বলছে, হামাসকে সহযোগিতা করার মতো কোনো সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র নেবে না। হামাস-ইসরাইল যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে চীন, ফ্রান্স, ব্রিটেনসহ ১৪টি দেশ।
হামাস বলছে, এর মধ্য দিয়ে ইসরাইলের গণহত্যার পথ পরিষ্কার করে দিলো যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ওয়াশিংটন।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডরোথি শিয়া বলেন, ‘এটা আশ্চর্যের কোনো বিষয় না। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার। হামাসের কাছে অস্ত্র প্রবাহ বন্ধ করতে হবে। হামাসকে গাজা ছাড়তে হবে। হামাসই যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে দিচ্ছে না। নিরাপত্তা পরিষদ এমন কিছু করতে পারে না, যেখানে হামাসকে পুরস্কৃত করা হয়। ইসরাইলের নিরাপত্তা, এমনকি সাধারণ ফিলিস্তিনিদের জন্যেও হামাস হুমকি। সাধারণ মানুষকে স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রতিনিয়ত ব্যবহার করছে হামাস।’
২০ লাখের বেশি মানুষের বসতির এই উপত্যকায় প্রায় ১১ সপ্তাহ ধরে ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করে রেখেছিল ইসরাইল। সম্প্রতি সেই নিষেধাজ্ঞা শিথিল হলেও ত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া এই উপত্যকায় ত্রাণ প্রবেশ আবারও সীমিত করে দিয়েছে ইসরাইল, এমন দাবি করেছে জাতিসংঘও। ইসরাইলি গণমাধ্যমগুলো বলছে, বুধবার থেকে বন্ধ গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের ত্রাণ সরবরাহ।
জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিখ বলেন, ‘জাতিসংঘ আর অংশীদার যত ত্রাণ সরবরাহকারী সংস্থা রয়েছে, সবাই কেরেম, শ্যালম ক্রসিং দিয়ে ত্রাণ সরবরাহ করতে চাইছি। কিন্তু ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী সেগুলোকে প্রতিবার স্ক্যান করছে গাজায় পৌঁছানোর আগেই। আজও ইসরাইলের চূড়ান্ত ছাড়পত্রের জন্য অপেক্ষা করছে আমাদের ১৩০ ত্রাণবাহী ট্রাক। কিন্তু ময়দাবাহী মাত্র ৫০টি ট্রাককে গাজায় প্রবেশের অনুমোদন দিয়েছে ইসরাইল।’
এমন অবস্থায় ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ নিয়েছেন জলবায়ু আন্দোলনের আন্তর্জাতিক মুখ গ্রেটা থুনবার্গ। বুধবার প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে, ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের ম্যাডলিনা জাহাজে করে গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছে বহরটি।
গ্রেটা থুনবার্গসহ এই জাহাজে রয়েছেন আরও ১২ জন। কিন্তু এই জাহাজের ওপর ড্রোন ওড়ার খবর পাওয়া গেছে। গ্রেটা জানান, এই জাহাজ শুধু গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছে না, সেই সঙ্গে ইসরাইলের আগ্রাসনেরও জবাব দিচ্ছে।
জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ বলেন, ‘অনেক বড় কিছুর ছোট অংশ আমরা। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিচ্ছে ফিলিস্তিনিরাই। সব দেশের সরকার এই সংঘাত নিরসনে ব্যর্থ, তাই আমরা এগিয়ে এসেছি। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও এই গণহত্যা বন্ধের কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। গল্পটা এমন না যে, আমরা গাজার উদ্দেশে ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছি। জবাব দিচ্ছি দশকের পর দশক ধরে ইসরাইল জাতিগত নিধনের জন্য যে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে। গাজায় চোখ রাখেন, আপনারা চোখ রাখলে নিরাপদে থাকবো।’
এদিকে এই ত্রাণের বহরেও চোখ ছানাবড়া ইসরাইলের। এই জাহাজ নানাভাবে ইসরাইলের হুমকির মুখে পড়ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্র বলছে, ইসরাইল এই জাহাজ জব্দের চিন্তা করছে, গাজা উপত্যকায় এই জাহাজ নোঙর করতে নাও দেয়া হতে পারে।
ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী বলছে, ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই জাহাজ আগামী ৭ জুন গাজা উপত্যকার জলসীমায় নোঙর করার কথা রয়েছে।